প্র চ্ছ দ কা হি নি
অনুক্তা ঘোষাল
নহি দেবী, নহি সামান্য নারী
না, আমরা মেয়েরা– দেবীও নই, হ্যাঁ আবার সামান্যও নই। আমরা মানুষ। একজন মানুষ যা পারে আমরাও তাই পারি। সেইটুকুই পারি। তার বেশিও নয়, তার কমও নয়। তাই আমাদের ‘দেবী’ বানিয়ে ‘সুপারম্যান’ বানানোর কিছু নেই। সুপারম্যান যা পারে আমরা তার কিছুই পারি না। কিন্তু মানুষ যা পারে আমরা তা পারি। মানুষ হিসাবে আমাদের দক্ষতা বা ক্ষমতাকে খর্ব করে দেখার কিছু নেই। আমরা পূজ্য নই, আবার অবহেলাও আমাদের কাম্য নয়। একটি ছেলে যা পারে, একটি মেয়েও তাই পারে… একটি ছেলে বা একজন পুরুষের পাশে আমরাও দাঁড়াতে পারি। লড়াই করতে পারি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। বন্ধু হয়ে। সহযোদ্ধা হয়ে। জীবন মানেই তো একটা যুদ্ধ। ঘরে বাইরে আমাদের যুদ্ধ করেই বাঁচতে হয়। পুরুষ কি ‘পুরুষ’ বলে এড়িয়ে যেতে পারে যুদ্ধ? না, কখনও না। তাঁকে বুক চিতিয়ে লড়তে হয় যেমন, হ্যাঁ আমরাও সেটা পারি। আমরাও তীর বা গুলির সামনে বুক পেতে দিতে পারি। পারি পুরুষের মতোই পরাক্রমশালীর কাছে পরাজয়ের গ্লানিও মাথা পেতে নিতে। হ্যাঁ, আমরা সব পারি। আমরা দেবী নই, রাক্ষসী নই, সুপারম্যান নই, সামান্যও নই। এটাই আমাদের বার্তা এবারের ‘International Women Day’-এর।
আমরা আজ নজর রাখব এমনই পাঁচজনের উপর… স্ব স্ব ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যারা ছড়িয়ে দিয়েছেন এই বার্তাই।
তানিয়া সান্যাল
এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এএআই) প্রথম মহিলা দমকল কর্মী…
দু’চোখে স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়েই ভাগ্যের মোড় ঘুরল। বর্তমানে সেই মেয়ে এয়ারপোর্ট অথরিটির দমকল বিভাগের প্রথম মহিলা কর্মী। কে এই মেয়ে? আর আগুন নেভাবে, তাও আবার মেয়ে হয়ে? বাঙালি তথা ভারতীয় সমাজে এমন একটা কথা শুনলে চোখ কপালে তুলবেন অনেকে। আর সেই মানসিকতাতেই আঘাত করেছেন কলকাতার আগুন কন্যা তানিয়া সান্যাল। ভারতের প্রথম মহিলা ফায়ার-ফাইটার হিসেবে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ায় (এএআই) যোগ দিয়েছেন তিনি। দমকলকর্মী হিসেবে এতদিন শুধু পুরুষদেরই নিয়োগ করত এএআই। এই প্রথম এএআই তে দমকল কর্মী হিসেবে যোগদান করে নজির গড়লেন এই বাঙালি মেয়ে।মহিলা ফায়ার-ফাইটার হিসেবে বর্তমানে এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ায় (এএআই) কর্মরত তিনি। কেন নিরাপদ জীবন ছেড়ে এমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নিলেন তানিয়া? আসলে প্রথম থেকেই স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে চেয়েছেন তিনি।ছকভেঙে গড়তে চেয়েছেন নতুন কোন নজির। সব সময় চেয়েছিলেন চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে, অচেনা জগতে নিজের পথ তৈরি করে নিতে। ‘‘তাই যখন এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার দেওয়া বিজ্ঞাপনটা খবরের কাগজে দেখলাম, এক মুহূর্তও দেরি করিনি,’’ বলেছেন তানিয়া। এএআইয়ে দমকলকর্মী হিসেবে যোগ দিতে ইচ্ছুক একঝাঁক উজ্জ্বল ছেলেমেয়েকে এখন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
ক্যাপ্টেন শর্বরী দাস
ভারতীয় পোর্ট সেক্টরের প্রথম মহিলা মেরিন কমান্ডার…
শর্বরী দাস কখনই মনে করেননি যে তিনি পুরুষ জগতে ব্যতিক্রমী কিছু করছেন যা অতিরিক্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য ।বরং তাঁর মতে নারীরা সকল কাজেই স্বয়ংসিদ্ধা। তিনি নিজেকে পুরুষদের থেকে আলাদা করে কখনোই ভাবেননি। তাঁর মতে নারীরা যে কোন ক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং নিজেদের দক্ষতা, ক্ষমতার বলে নারীরা যে কোন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারে। আর এই বিশ্বাসে ভর করেই তিনি জীবনে পেরিয়ে গেছেন একের পর এক মাইলস্টোন। আর তাই তো তিনি ভারতীয় পোর্ট সেক্টরের প্রথম মহিলা কমান্ডার। তিনি 1992 সালে মেরিন সেকশনে লেডি ট্রেইনি অফিসার হিসাবে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে যোগদান করেন।তিনি কখনও পিছনে ফিরে তাকাননি এবং 20 বছর পর 2011 সালে তিনি পাইলট পরিষেবায় যোগ দেন।
শর্বরী দাস ছিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে সার্ভিসের অংশ যা এশিয়ার প্রাচীনতম। 140 বছর ধরে এটি শুধুমাত্র পুরুষ কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। 1998 সালে এই বিভাগে পদোন্নতি পাওয়া প্রথম মহিলা অফিসার ছিলেন শর্বরী৷
রাখী দাশগুপ্ত (দত্ত)
অল ইন্ডিয়া রেডিওর রেডিও প্রেসেন্টর, স্পোর্টস পারসন, খাদ্য দপ্তরের চিফ ইন্সপেক্টর…
১৯৯৪ সালে প্রথম আকাশবাণী স্পোর্টস সেকশন এ কাজ শুরু করেন তিনি। ৩০ বছর পেরিয়ে আজ তিনি আকাশবাণীর সিনিয়র রেডিও প্রেসেন্টর।বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া, ম্যাগাজিনে চুটিয়ে কাজ করার পাশাপাশি দূরদর্শনে মিলন নস্করের সাথে স্পোর্টস প্রোগ্রামেও তাঁর সাথে কাজ করেছেন তিনি। তাঁর জীবনের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি হয় সেদিন যেদিন তিনি প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা ফুটবল দলের স্ট্রাইকার হিসাবে খেলা শুরু করেন। প্রথম বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা ফুটবল দল অল ইন্ডিয়া ইন্টার্ভাসিটি টুর্নামেন্ট খেলতে গেল। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা ফুটবল দলের হয়ে আরও আরও অনেক টুর্নামেন্ট খেলেন।এরপর সেখানে থেকে সরাসরি সুযোগ পান বেহালা ঐক্য ফুটবল দলের হয়ে ইন্ডিয়ান ফুটবল লিগে খেলার। বেশ কয়েকবছর সেখানে খেলেন তিনি।এরপর ২০০১ সালে সাব ইন্সপেক্টর হিসাবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।২৪ বছরের কর্মজীবন কাটিয়ে বর্তমানে তিনি খাদ্য দপ্তরে চিফ
ইন্সপেক্টর হিসাবে কাজ করছেন।
অ্যাডলিনা গাঙ্গুলী
মিসেস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, মিসেস ট্যালেন্টেড ২০১৮, আই পি আই এম এর কর্ণধার ও প্রতিষ্ঠাতা…
প্রায় এক দশক ধরে, অ্যাডোলিনা গাঙ্গুলী তরুণ, গৃহিণী, কর্মজীবী পেশাদার এবং আগামী দিনে নারীদের তাদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করছেন।আজকের বিশ্বে, ব্যক্তিগতভাবে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ইমেজের গুরুত্ব খুব বেশি।তাই বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণভাবে নিজের ইমেজ পরিচালনা করা জীবনে সাফল্য অর্জনের একমাত্র চাবিকাঠি। কলকাতার বাসিন্দা, অ্যাডোলিনা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর এবং মাস কমিউনিকেশনে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ৮টি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মুকুট জিতেছেন এবং গত দশকে একটি বহুজাতিক কোম্পানির সাথে কর্পোরেট জীবনও যাপন করেছেন। অ্যাডোলিনা তাঁর প্যাশন এবং প্রফেশন উভয় ক্ষেত্রে সমান ভাবে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন।
অ্যাডোলিনা তিনি তাঁর নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আই পি আই এম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয়লাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী তরুণীদের সহায়তা করতেও সফল হয়েছেন এবং তাঁর নিষ্ঠা এবং সৎ প্রচেষ্টার মাধ্যমে, তিনি আগামী বছরগুলিতে তাদের সাহায্য করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন যাতে অ্যাডোলিনা বিভিন্ন ব্র্যান্ড লঞ্চের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিকে বর্ধিত স্বীকৃতি এবং সচেতনতা অর্জনে সহায়তা করতে পারেন।
ডঃ অনন্যা ভৌমিক
ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর অফ কোড ওয়েলনেস
ডাঃ অনন্যা ভৌমিক কলকাতার অন্যতম সেরা পুষ্টিবিদ।পুষ্টিবিদ হিসেবে তাঁর ১৮ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি অসংখ্য রোগীকে সাহায্য করেছেন। তিনি ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশনে এমএসসি এবং ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।তিনি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে হেলথ ম্যানেজমেন্টে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে ডঃ অনন্যা ভৌমিক একটি সুপরিচিত নাম যিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ডঃ ভৌমিক প্রায় দশ বছর ধরে রোগীদের সেবা করে আসছেন। প্রায় পাঁচটি আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় প্রকাশনা অনুযায়ী মিসেস ভৌমিক পুষ্টি ক্ষেত্রে সেরা জ্ঞানী পুষ্টিবিদদের একজন। তাঁর ১৩টি আন্তর্জাতিক রিসার্চ পাবলিকেশন আছে। ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাঘাত, বিপাকীয় সিন্ড্রোম ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের রোগীরা তাঁর পরামর্শের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক এবং বিশিষ্ট দিকগুলির মধ্যে একটি হল ওজন হ্রাস এবং ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাঁর অতুলনীয় উৎকর্ষতা। তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি এবং যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ এবং উপদেশ কর্মক্ষেত্রে তাঁর গভীর জ্ঞানের সাক্ষ্য দেয়।
Facebook Comments